পাখির পরিযায়ন কারণ ও ধরন

যুগ যুগ ধরে পাখিরা পরিযায়ন করে আসছে। এটি প্রকৃতির একটি অদ্ভুত খেয়াল। তবে এর পেছনে সুনির্দিষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। বিশেষ ঋতুতে পাখিদের জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ফুরিয়ে এলে পাখিরা অন্যত্র যেখানে সেসব উপাদানের প্রাপ্যতা আছে, সেখানে গিয়ে অবস্থান করে। এটা তারা করে বেঁচে থাকা এবং প্রজননের উদ্দেশ্যে। সময় ও পরিবেশ অনুকূলে এলে তারা সাবেক স্থানে ফিরে আসে।  

পাখিদের পরিযায়ন কয়েক হাজার ফুটের জন্যও হতে পারে আবার কয়েক হাজার কিলোমিটারের জন্যও হতে পারে। ক্লার্কস নাটক্র্যাকার পর্বতের গায়ে কয়েক হাজার ফুট উঁচুতে অথবা ঢালুতে ওঠানামার মাধ্যমে পরিযায়ন করে। অন্যদিকে দাগিলেজ-জৌরালি বিরতিহীন একটানা দশ হাজার কিলোমিটারের বেশি উড়ে পরিযায়ন করে।

একটি মতবাদে মনে করা হয়, হাজার হাজার বছর আগে প্রথমে কিছু কিছু পাখি উন্নত জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে পরিযায়ন শুরু করে যা তাদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা বিধান করে। তা থেকে তারা এই স্বভাব পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করতে সমর্থ হয়।   

পাখিরা সাধারণত ঝাঁক বেঁধে পরিযায়ন করে। তবে ছোট ঝাঁকে অথবা একাকী পরিযায়নও হয়ে থাকে। পথ চেনার জন্য তারা সূর্য, তারা এবং পৃথিবীর চুম্বক কেন্দ্রকে কম্পাস হিসেবে ব্যবহার করে। এ ছাড়াও ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন গঠনপ্রণালি, সমুদ্রতট এবং দ্বীপের সীমারেখা অনুসরণ করে উড়ে চলে। সারস এবং জলজ পাখিরা তাদের পরিচিত পথ ধরেই পরিযায়ন করে। পথে তারা বিশ্রাম এবং খাদ্য গ্রহণের জন্য সুবিধামতো স্থানে যাত্রাবিরতি করে থাকে। ছোট পাখিরা ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে পরিযায়ন করে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই পরিযায়ন কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপদ সংকুল। খারাপ আবহাওয়া, পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব এবং শিকারিদের আক্রমণ পাখির শারীরিক এবং মানসিক শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে। এর ফলে দুর্বলরা ক্যাজুয়ালটির শিকার হয়। এ ছাড়াও যোগাযোগ টাওয়ার এবং উঁচু ভবনগুলোও বেশ বড় ধরনের বিপদ।

পাখিরা এসব গগনভেদী বস্তুর আলো দেখে আকৃষ্ট হয় এবং ধাক্কা লেগে অসংখ্য পাখি অকালে মৃত্যুবরণ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ পাখি শীতকালে পরিযায়ন করে থাকে। তবে শীতকাল ছাড়াও অনেক পাখি পরিযায়ন করে। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেক প্রজাতির পাখি পরিযায়ী হয়ে আসে। তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস। অন্যান্য জলজ পাখিও আগমন করে। হাওর, বিল, বড় নদী এবং উপকূলে তাদের দেখতে পাওয়া যায়।  

তবে সব পাখি পরিযায়ন করে না বা প্রয়োজন হয় না। যেমন আমাদের চড়ুই, শালিক, কাক, দোয়েল, বুলবুলি, ফিঙে ইত্যাদি। কারণ সারা বছরই তাদের খাদ্য এবং প্রজনন পরিবেশ উপস্থিত থাকে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //